মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (সরকারী হাসপাতাল) রোগীদের জন্য বরাদ্দের খাবার অব্যাহতভাবে লুটপাঠ চলছে। যেন দেখার কেউ নাই! হাসপাতালের বাবুর্চি নেজাম প্রতিদিন দুপুরে ও রাতের বেলায় রোগীদের জন্য খাবার বাইরের লোকজনের কাছে বিক্রি করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
গত কয়েক দিন পূর্বে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসপাতালের ক্যান্টিনে বাইরের লোকজনের মাঝে খাবার বিক্রি বন্ধে জাসপাতালের টিএইচওকে নির্র্দেশ দিলেও কোন কাজ হয়নি। উল্টো আরো বেপরোয়া হয়ে হাসপাতালের বাবুর্চি নেজাম উদ্দিন প্রতিদিন বাইরের লোকজনের মাঝে খাবার বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। হাসপাতালের বাবর্চি নেজামই এখন একাই একশ। হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা এমনকি টিএইচওকে ধার ধারেনা এ কর্মচারী। নিজের ইচ্ছেমতো হাসপাতালের ক্যান্টিনকে খাবার হোটেল বানিয়ে বাইরের লোকজনের মাঝে খাবার বিক্রির কাজ চালাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালের টিএইচও ডা: মুজিবুর রহমান জানান, গত কয়েক দিন পূর্বে হাসপাতালের ক্যান্টিনে বাইরের লোকজনের মাঝে খাবার বিক্রি না করার জন্য হাসপাতালের বাবুর্চি নেজাম উদ্দিনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টিএইচওর এ নির্দেশের সত্যতা যাচাই করতে আজ ৩০ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালের নিচ তলায় অবস্থিত ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা গেছে, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কার্যালয় ও সাব-রেজিষ্টারের কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মচারী খুব আয়েশেই রোগীদের খাবার হাসপাতালের বাবুর্চি নেজাম উদ্দিনের কাছ থেকে ক্রয় করে তৃপ্তি সহকারে গিলে খাচ্ছেন। প্রতি বেলা খাবারের জন্য বাবুর্চি নেজাম জনপ্রতি ৫০ টাকা করে নেন। প্রতিদিন দুপুরে প্রায় ৫০ জন ও রাতের বেলায় ৩০ জন বাইরের লোক হাসপাতালের ক্যন্টিন থেকে খাবার ক্রয় করে খান। রোগীদের নামেমাত্র খাবার দিয়ে বাকী খাবার বাইরের লোকজনের মাঝে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি দেখিয়ে ঠিকাদাররের কাছ থেকে খাবার সামগ্রী নিয়ে হাসপাতালের ক্যান্টিনে রান্না করেন বাবুর্চি নেজাম উদ্দিন। আর রোগীদের সরকারী নির্দেশিত মতে খাবার দেওয়া হয়না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে রোগীদের খাবার লুটপাটের মহোৎসব চললেও তা বন্ধে কোন ধরনের কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ঠ স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হেয়ছে। পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী (বাবুর্চি) নেজামের বিরুদ্ধে রোগীর খাবার নিয়ে বানিজ্যে করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অবিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে হাস মুরগি, কবুতর ও ছাগলের ক্ষেত খামারও গড়ে তুলেছেন ওই কর্মচারী।
অভিযোগ রয়েছে, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডা: মো. মুজিবুর রহমানের আস্কারায় ওই বাবুর্চি নেজাম দীর্ঘদিন ধরে রোগীর খাবার বাইরে বিক্রি ও হাসপাতালের কেন্টিনকে খাবার হোটেল বানালেও সংশ্লিষ্ঠ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খোদ কক্সবাজারের সিভিল সার্জন সরকারী হাসপাতালের এ অনিয়ম বন্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। প্রতি মাসে রোগীদের খাবার লুটপাট করে পেকুয়া হাসপাতাল কেন্দ্রীক বাবুর্চি নেজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অসাধু সিন্ডিকেট সরকারী অর্থ লুটপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে।
এ নিয়ে বেশ কয়েকবার এ প্রতিবেদক পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডা: মুজিবুর রহমানকে অবগত করলেও তিনি কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতীতের তুলনায় রোগীদের খাবার লোপাটের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়ে খাবার লুটপাটের মহোৎসবে পরিনত হয়েছে।
অবশ্য, আজ ৩০ এপ্রিল দুপুরে এ প্রতিবেদক ডা: মুজিবুর রহমানকে বিষয়টি নিয়ে আবারো ফোনে অবগত করলে তিনি জানান, তার নির্দেশও শুনছেনা বাবুর্চি নেজাম। তাই খুব দ্রুত ওই কর্মচারীকে পেকুয়া সরকারী হাসপাতাল বদলীসহ হাসপাতালের ক্যান্টিনে খাবার বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, পেকুয়া হাসাপাতালের কর্মচারী (বাবুর্চি) নেজাম উদ্দিন ও হাসতালের কতিপয় কর্মকর্তা কর্তৃক পেকুয়া হাসপাতালের ‘কেন্টিনকে খাবার হোটেলে’ রূপান্তর করায় তা বন্ধে গত কয়েক মাস পূর্বে কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় সচেতন এলাকাবাসীদের পক্ষে। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের তিন মাস অতিক্রম হলেও হাসপাতালের কর্মচারী নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ হাসপাতালের রোগীর খাবার বিক্রি বন্ধ হয়নি। এছাড়াও হাসপাতালের খাবার সরবরাহে সরকারীভাবে নিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও রোগীদের খাবার সরবরাহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের নার্স সঞ্চিতা রোগীদের ডায়েট তালিকা লিপিবদ্ধের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
হাসপাতালের বাবুর্চি নেজাম উদ্দিনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্ষেগে গিয়ে বলেন, ‘আমার হাসপাতালে আমি খাবার বিক্রি করলে আপনাদের জানাতে হবে কেন উল্টো প্রশ্ন ছুঁঁড়ে দিয়ে আর কথা বলতে রাজি হননি। হাসপাতালের কেন্টিনকে খাবার হোটেল ও রোগীর খাবার লুটপাটের এ মহোৎসব দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়া হাসপাতালে চলে আসলেও খোদ হাসপাতালের বড় কর্তা ডা: মুজিবুর রহমানের এ নিয়ে কোন ধরনের মাথা ব্যথা নেই।
পাঠকের মতামত: